প্রিয় প্রজন্ম || Priyo Projonmo
জো বাইডেনের সেলফিতে হঠাৎ চাপমুক্ত শেখ হাসিনা

বিষয়-বিশ্লেষণ

জো বাইডেনের সেলফিতে হঠাৎ চাপমুক্ত শেখ হাসিনা

আসল সত্য ছবি এখন সবাই চায়। হোয়াইট হাউসেও নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিং হয়। বিএনপির ব্রিফিং, কর্মসূচিতে ফটোসাংবাদিক, টিভি ক্যামেরা না পৌঁছা পর্যন্ত তারা কি তা শুরু করেন? আমরা যখন সাংবাদিকতায় আসি ইত্তেফাকের সাংবাদিক না পৌঁছা পর্যন্ত অনুষ্ঠান শুরু হতোনা! এরপর শুরু হয় একুশে টিভির জন্যে অপেক্ষা! এখনতো প্রিন্ট মিডিয়ার চাইতে ইলেক্ট্রোনিক মিডিয়ার কদর বেশি। সোশ্যাল মিডিয়া এখন আরও শক্তশালী। স্পট থেকে লাইভ সম্প্রচার শুরু হয়ে যায়! এমন এক বাস্তবতায় বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি জো বাইডেন তোলায় তা এখন বিশ্বমিডিয়ারও ভাইরাল আইটেম।

সেই পরিচালক নিজেই এবার ছুটি নিলেন

সেই পরিচালক নিজেই এবার ছুটি নিলেন

কানাডায় ছেলেমেয়ের কাছে চলে গিয়েছিলেন আজিজুর রহমান। অনেক বছর ধরে সেখানেই তিনি থাকতেন। বার্ধক্যজনিত নানান জটিলতায় ভুগছিলেন ৮২ বছর বয়সী এই কিংবদন্তীর চলচ্চিত্র নির্মাতা। অতঃপর সোমবার বাংলাদেশ সময় রাতে ছুটির ঘন্টা বাজলো তাঁর। মেয়ে বিন্দি রহমান বলেছেন, কিছুদিন ধরে দেশে যাবার জন্যে তাঁর বাবা ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। তারা তাকে আটকে রেখেছিলেন। তাঁকে আর আটকে রাখা গেলোনা। অতঃপর দেশেই ফিরে আসছেন আজিজুর রহমান। তবে লাশ হয়ে। সান্তাহারের পারিবারিক কবরস্তানে তাঁর শেষশয্যা হবে। ভাল থাকবেন আজিজুর রহমান। আপনাদের কারনে তখন বাংলাদেশের সিনেমার জগতটা অনেক ভালো ছিল। নিজের ছুটি হবার পর, আপনিতো চলে গেছেন ‘অনেক দূরের নীল আকাশে সবুজ ঘাসে খুশিতে হারিয়ে।’

আমার আম্মা

আমার আম্মা

মাস খানেক আগে আমার স্ত্রী স্বপ্নে দেখেন অর্মত্য একটি নতুন কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে! অমর্ত্য কি আগে চলে গিয়ে তার দাদির জন্যে অপেক্ষায় ছিলো? আম্মার মৃত্যুতে যারা শোক প্রকাশ করেছেন, সমবেদনা জানিয়েছেন, দোয়া করেছেন, আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আপনাদের প্রার্থনায় রাখুন আমাদের আম্মাকে। তিনি একজন ভালো মানুষ, ধার্মিক-দয়ালু-প্রগতিশীল-দানশীল মানুষ ছিলেন। সবাই যার যার মায়ের প্রতি যত্মবান থাকুন। আম্মার মৃত্যু সংবাদ পাবার পর প্রথম ভেবেছি, শিশুকাল থেকে কত কষ্টে তিনি আমাদের বড় করেছেন। নোংরা নেপি পরিস্কার করতে কখনও ভাবেনই এটা কত নোংরা। এটাইতো মাতৃ জীবন। মা যার নেই সেই জানে তার কেউ নেই। সব মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা।

এদেশে শ্যামল রঙ রমণীর সুনাম শুনেছি

এদেশে শ্যামল রঙ রমণীর সুনাম শুনেছি

আঠার বছর ধরে আইভী নারায়নগঞ্জের মানুষের ভোটে নির্বাচিত নেত্রী। এভাবে ধারবাহিক মানুষের ভোট পাওয়া এত সহজ নয়। কাজ দেখে ভোট দেয় মানুষ। ভালোবেসে দেয়। ভোটটা জোর করে এক-দু’বার নেয়া সম্ভব। বা দলের জোয়ারে কলাগাছও নির্বাচিত হয়। কিন্তু শামীম ওসমান বললেও আইভীতো কোন কলাগাছ প্রার্থী নন। শেখ হাসিনা কলা গাছ প্রার্থী হিসাবে আইভীকে প্রার্থী করেননা। নারায়নগঞ্জের ভোটাররা কলাগাছ দেখে ভোট দেননা। আইভীকে তারা কাজ দেখে বারবার ভোট দেন। এবারও ভোট দিয়েছেন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসাবে আঠারো বছরের জীবনে আইভির বিরুদ্ধে বড় কোন অভিযোগ আসেনি যা তার গ্রহনযোগ্যতা বা জনপ্রিয়তায় ধস নামাতে পারে।

ঢাকায় বানানো প্রথম ছবি ‘মুখ ও মুখোশ’

ঢাকায় বানানো প্রথম ছবি ‘মুখ ও মুখোশ’

বলা হতো পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশের স্যাতস্যাতে আবহাওয়া সিনেমা বানানোর উপযুক্ত নয়! এ নিয়ে একটি ইতিহাস আছে। ১৯৫৩ সালের মার্চে ঢাকায় ছবি বানানোর সম্ভাব্যতা নিয়ে একটি আলোচনা সভা ডাকা হয়েছিল। গুলিস্তান সিনেমা হলের অবাঙালি মালিক খান বাহাদুর ফজল আহমদ সেখানে বলেন পূর্ব পাকিস্তানের আদ্র আবহাওয়ায় ছবি বানানো সম্ভব নয়! সেখানেই এ কথার প্রতিবাদ করেন একজন আব্দুল জব্বার খান। তিনি বলেন এখানেতো ভারতীয় ছবির শুটিং হয়েছে। গুলিস্তান সিনেমা হলে দেখানোও হয়েছে সে ছবি। ভারতীয়রা এখানে সিনেমা বানাতে পারলে আমরা পারবোনা কেনো? আমি চ্যালেঞ্জ নিয়ে বললাম আমি এখানে সিনেমা বানিয়ে দেখাবো।

মিশরীয় পাসপোর্টে ফেরাউন একবার ফ্রান্স গিয়েছিলেন

মিশরীয় পাসপোর্টে ফেরাউন একবার ফ্রান্স গিয়েছিলেন

মৃত্যুর পর ফেরাউনের মমি ও সমাধির বর্ননা আছে কোন কোন ইতিহাসে। আবার বলা হয়েছে তার পরিনতি পরবর্তী পৃথিবীর অবিশ্বাসীদের মনে করিয়ে দিতে তার মরদেহ পাথর করে রাখা হয়। তার বর্তমান মমিটি ১৮৮১ সালে আবিষ্কৃত হয়। রানী নেফাত্রি/নেফারট্রি ছিলেন রামসিস-টু’র সবচেয়ে আলোচিত স্ত্রী। মিশরীয় উচ্চারনে এই রানীর নাম এমন বিভিন্ন হয়। তার সৌন্দর্য্যের কারনে তিনি বিশেষ আলোচিত ছিলেন। এই রানীর মমি-সমাধির রত্মরাজি বিভিন্ন সময়ে লুটতরাজের শিকার হয়। রানীর নানা রকম মূর্তি, স্যুভেনুর মিশরের পর্যটন শিল্পের অন্যতম প্রধান বিক্রিত পণ্য। পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চির মতো লম্বা ছিলেন ফেরাউন। তার মমিতে তার চুল, ভ্রুর বেশ কিছু অবিকল অবিকৃত টিকে আছে। নব্বুই বছর বয়সে মৃত্যুর সময় চুলগুলো খুব স্বাভাবিক সাদা হয়ে গিয়েছিল।

হযরত মোহাম্মদের(দঃ) বংশধররা থাকেন কায়রোয়

হযরত মোহাম্মদের(দঃ) বংশধররা থাকেন কায়রোয়

ফুটপাতের একজন পত্রিকা বিক্রেতা নিশ্চয় সাধারন একজন অস্বচ্ছল গরিব নারী। তাকে এমন গহনায় মোড়ানো দেখে আমার অবাকই লাগে। বাংলাদেশে এমন আমরা দেখিনা। নিরাপত্তার কারনেও সাধারনত বাংলাদেশের মায়েরা-মেয়েরা এমন প্রকাশ্য স্থানে সোনার গহনা সচরাচর পরেনওনা। পরে কায়রোর এক সাংবাদিকের মাধ্যমে জেনেছি সেই হকার মহিলা এক আরব আদিবাসী বেদুঈন সম্প্রদায়ের সদস্যা। বাজারে বা প্রকাশ্য স্থানে যেতে তারা এমন নিজেদের সোনার গহনায় মুড়িয়ে রাখতে পছন্দ করেন। এমন কয়েকদিন পত্রিকা নিতে নিতে সেই হকার মহিলার সঙ্গে আমার একটি ভাব হয়ে যায়। আমি একটা ইংরেজি পত্রিকা নেই তা তিনি এরমাঝে জেনে বুঝে গেছেন। তাই তার সামনে গেলেই হেসে সেই পত্রিকার একটি কপি বাড়িয়ে দিয়ে পয়সা বুঝে নেন। তার হাসি দেখে বুঝতে পারি তার দাঁত কয়েকটিও সোনায় বাঁধানো!

জন্মদিনে তোমাকে অভিবাদন আমাদের জাতির পিতা

জন্মদিনে তোমাকে অভিবাদন আমাদের জাতির পিতা

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ ছেড়ে কেনো দেশের হাজার হাজার যুবক প্রতিবছর ভূমধ্য সাগরে ডুবে মরতে যায় তা ওবায়দুল কাদের বা হাসান মাহমুদদের ব্রিফিং’এ স্থান পায় না কোন দিন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তি উপহাস করে বলেন যারা ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরে তারা নাকি গুম হওয়া ব্যক্তি! প্রিয় জাতির পিতা, জন্মদিনে আপনাকে আবারও অভিবাদন। আপনার আত্মা চিরশান্তি লাভ করুক। টুঙ্গিপাড়ার মাটি আপনাকে ধারন করতে পেরে ধন্য। আপনার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই। কিন্তু আপনার মেয়ে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারেননি। দেশের সিংহভাগ মানুষের কত ছোট ছোট চাহিদা! তারা ভিক্ষা চায় না। শুধু চায় আপনাদের কুত্তাগুলো সামলান। নির্ধারিত সহনীয় মূল্যে চাল-ডাল-তেল-চিনি কিনে খেয়ে কোনমতে দিন পার করতে চায় দেশের সিংহভাগ মানুষ। কিন্তু এটাই তাদের দেবার ব্যবস্থা নেই। আমাদের ক্ষমা করবেন প্রিয় জাতির পিতা। এখনও বলি, আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমেই দেশে শান্তি আসবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

জাতির পিতা যখন অন্ধকার সমাধি বাড়িতে একা

জাতির পিতা যখন অন্ধকার সমাধি বাড়িতে একা

প্রিয় প্রজন্ম, ১৯৮৬ সালে আমি যখন প্রথম সে বাড়িতে যাই সেখানে পারতপক্ষে তেমন কেউ যেতেননা। নানাকারনে অনেকের সে মুখো হতে গা ছমছম ভয় করতো! আওয়ামী লীগও তখন ছন্নছাড়া দল একটি! কবে ক্ষমতায় আসবে আদৌ আসবে কীনা তখন কেউ তা নিশ্চিত জানতোনা। একমাত্র বঙ্গবন্ধুর জীবিত দুই মেয়ে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা পিতার সমাধি জিয়ারত উপলক্ষে দাদা-দাদির বাড়িটায় গেলে সেখানে কিছু লোকের ভিড় হতো। ধুলি জমা বাড়ির দরজা-জানালা মুছে পরিষ্কার করতেন কেয়ারটেকার বৈকুন্ঠ নাথ বিশ্বাস। আমিও সে বাড়িতে গিয়ে একমাত্র বৈকুন্ঠ দাদাকে সক্রিয় পেয়েছিলাম। প্রায় অন্ধকার একা একটি বাড়িতে তিনিই বাতি জ্বালাবার ব্যবস্থা করতেন।

সেই পরিচালক নিজেই এবার ছুটি নিলেন

সেই পরিচালক নিজেই এবার ছুটি নিলেন

কানাডায় ছেলেমেয়ের কাছে চলে গিয়েছিলেন আজিজুর রহমান। অনেক বছর ধরে সেখানেই তিনি থাকতেন। বার্ধক্যজনিত নানান জটিলতায় ভুগছিলেন ৮২ বছর বয়সী এই কিংবদন্তীর চলচ্চিত্র নির্মাতা। অতঃপর সোমবার বাংলাদেশ সময় রাতে ছুটির ঘন্টা বাজলো তাঁর। মেয়ে বিন্দি রহমান বলেছেন, কিছুদিন ধরে দেশে যাবার জন্যে তাঁর বাবা ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। তারা তাকে আটকে রেখেছিলেন। তাঁকে আর আটকে রাখা গেলোনা। অতঃপর দেশেই ফিরে আসছেন আজিজুর রহমান। তবে লাশ হয়ে। সান্তাহারের পারিবারিক কবরস্তানে তাঁর শেষশয্যা হবে। ভাল থাকবেন আজিজুর রহমান। আপনাদের কারনে তখন বাংলাদেশের সিনেমার জগতটা অনেক ভালো ছিল। নিজের ছুটি হবার পর, আপনিতো চলে গেছেন ‘অনেক দূরের নীল আকাশে সবুজ ঘাসে খুশিতে হারিয়ে।’

শরণার্থী হিসাবে ঢাকায় আসা রাজ্জাক হয়ে উঠেছিলেন ঢালিউডের নায়করাজ!

শরণার্থী হিসাবে ঢাকায় আসা রাজ্জাক হয়ে উঠেছিলেন ঢালিউডের নায়করাজ!

তাঁর পুরো নাম আব্দুর রাজ্জাক। ১৯৪২ সালে কলকাতায় জন্ম। স্কুলে থাকতে স্বরস্বতী পুজার নাটকে অভিনয় করেছেন। অনুশীলনে তার অভিনয় দেখেই তাকে নাটকের মূলচরিত্র দেয়া হয়। কলকাতায় ‘শিলালিপি’ নামের একটি ছবিতে কাজ করেন। সিনেমায় কাজের স্বপ্ন নিয়ে একবার মুম্বাইও গিয়েছিলেন। কিন্তু সুবিধা করতে পারেননি। ১৯৬৪ সালে কলকাতায় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা শুরু হলে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী খায়রুন্নেসা লক্ষী ও বড় ছেলে বাপ্পারাজ। শুরু হয় ঢাকায় শরণার্থী জীবন। শরণার্থী শিবিরে স্ত্রী-সন্তানকে রেখে দেখা করেন আব্দুল জব্বার খানের সঙ্গে। ইনি ঢাকার প্রথম ছবি ‘মুখ ও মুখোশের নির্মাতা। কলকাতার পীযুষ বসু নামের একজন তাঁকে এই যোগসূত্রটি দিয়েছিলেন। বলে দিয়েছিলেন ঢাকায় পৌঁছে আব্দুল জব্বার খান ও শব্দ গ্রাহক মনি বসুর সঙ্গে দেখা করবি। আমি চিঠি লিখে দিচ্ছি। তারা তোকে একটা না একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেবেই দেবে। আব্দুল জব্বার খান তাঁকে ইকবাল ফিল্মসের অফিসে একটি চাকরি ব্যবস্থা করে দেন। চাকরিটা পেয়ে তিনি কমলাপুরে একটি বাসা ভাড়া নেন আশি টাকায়।

জীবন থেকে নেয়া, যে কারণে হারিয়ে গেলেন জহির রায়হান

জীবন থেকে নেয়া, যে কারণে হারিয়ে গেলেন জহির রায়হান

এ ছবি বানানোর সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুবের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের রাজনৈতিক আন্দোলন চলছিল। বঙ্গবন্ধু তখন কারাগারে। পাকিস্তানের শাসনামলে তিনি এভাবে যৌবনের বড় অংশ কারাগারেই কাটিয়েছেন। উনসত্তরে শহীদ হন আসাদ। নরসিংদীর শিবপুরে তাঁর বাড়ি। আসাদ মেননপন্থী ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। এর কারনে মাওলানা ভাসানী আমজাদ হোসেনকে ডেকে শহীদ আসাদকে নিয়ে একটি প্রামান্য চিত্র বানাতে বলেন। কিন্তু পাকিস্তানী জান্তার চাপে আসাদের পরিবারের অনুরোধের সে উদ্যোগটি স্থগিত রাখতে হয়। জহির রায়হান তখন আমজাদ হোসেনকে ডেকে একটি রাজনৈতিক ছবির কাহিনী লিখতে বলেন।

ক্রাচের কর্নেলের শেষযাত্রা

ক্রাচের কর্নেলের শেষযাত্রা

২০ জুলাই ১৯৭৬। কারাগারের বার্তাবাহক এসে কর্নেল তাহেরকে জানিয়ে গেল পরের দিন তাঁর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে। তাহের সব শুনলেন। নিঃশঙ্ক চিত্তে ঠান্ডা মাথায় একটা ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় দিলেন বার্তাবাহককে। তাঁর এমন শীতল প্রতিক্রিয়ায় বার্তাবাহকতো অবাক! কারন সাধারনত ফাঁসির আসামীরা এমন খবর শুনে হাউমাউ করে কাঁদে। আর ইনি কিনা ঠান্ডা মাথায় বললেন, থ্যাংকু। ধন্যবাদ। চিন্তায় পড়ে যায় বার্তাবাহক! লোকটার মাথাটাথা ঠিক আছেতো! কারাগারের নিয়ম অনুসারে একজন মৌলভী তাহেরকে তওবা পড়াতে আসেন। মৌলভী তাহেরকে বলেন জীবনে করা গুনাহ-অপরাধের কাছে আল্লাহর কাছে মাফ চান। আল্লাহ মাফ করার মালিক। কিন্তু মৌলভীকে পাত্তাই দিলেননা তাহের। কারন তিনি যা বিশ্বাস করতেন তা অকপটে বলতেন। মনে একটা মুখে একটা এমন চরিত্রের তিনি ছিলেননা। তাহের মৌলভীকে বললেন, ‘আমি নিষ্পাপ। আপনাদের সমাজের কালিমা আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি। কখনো না। আমি সম্পূর্ন নিষ্পাপ। আপনি এখন যান। আমি এখন ঘুমাবো’। তাঁর এমন কথায় চমকে যান মৌলভীও। কারন তাঁর কাজ হচ্ছে ফাঁসির আসামিকে তওবা পড়ানো। কিন্তু ফাঁসির এমন আসামি এর আগে তিনি কখনো পাননি-দেখেননি। মৌলভী চলে যাবার পর জনতার তাহের সত্যি সত্যি ঘুমাতে যান। এবং ডুবে যান গভীর নিদ্রায়। যে দেশের স্বাধীনতার জন্যে তিনি যুদ্ধ করেছেন সে দেশের আলো-হাওয়ায় সেটিই ছিল শেষ ঘুম, মুক্তিযুদ্ধের সাহসী বীর সেনানী তাহেরের।

শেষ দেখায় লুৎফাকে যা বলেছেন তাহের

শেষ দেখায় লুৎফাকে যা বলেছেন তাহের

পরিবারকে সেখানে দেখা করার খুব অল্প সময় দেয়া হয়েছিল। কারারক্ষীরা তাই তাদের বারবার তাগাদা দিচ্ছিলো। প্রিয়তমা স্ত্রী লুৎফার সঙ্গে আলাদা কিছু সময় চাইলেন ক্র্যাচের কর্নেল। লুৎফা বাকরুদ্ধ। চোখ দুটি ভাষাহীন। মুখ দিয়ে তাঁর কোন কথা বেরুচ্ছেনা। তাহের হাত চেপে ধরলেন লুৎফার। এরপর বললেন, শোনো- এই উপমহাদেশে ক্ষুদিরামের পর আমারই প্রথম রাজনৈতিক কারনে ফাঁসি হচ্ছে। দূঃখ করোনা, মাথা নিচু করোনা। কারন আমি কোন অন্যায় করিনি। এ দেশ সৃষ্টির জন্যে আমি রক্ত দিয়েছি। এখন সাধারন মানুষের মুক্তি ও শোষন মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় প্রান দেবো এরচেয়ে সুখের কি হতে পারে।

ক্র্যাচের কর্নেলের মা

ক্র্যাচের কর্নেলের মা

সাধারন এক টিনের চালা ঘর দেখিয়ে চলে গেল হাঁটুরে পথ প্রদর্শক। আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন একজন মা। আমি তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম করে বললাম মা আমি আপনাকে দেখতে এসেছি। মা আমাকে মাথায় হাত রেখে যেন দোয়া করলেন। এরপর বললেন তুমি একটু কবর জিয়ারত করে আসো। আমি তোমার জন্যে ভাত বসাই। বাংলাদেশ ভ্রমনের পথে পথে আমি এমন অনেক মা পেয়েছি। কিন্তু কাজলার মসজিদের পাশে বাঁধানো কবরের শিলালিপি পড়ে আমি চমকে যাই। এই মা’তো কর্নেল তাহেরের মা। বিদেশি মিডিয়া যে মুক্তিযোদ্ধার নাম দিয়েছিল ক্র্যাচের কর্নেল। কর্নেল তাহেরের মা’কে আজ আমি মা ডেকেছি। আজ থেকে তিনি আমারও মা হয়ে গেছেন। আমাদের এই মায়ের নাম আশরাফুন্নেসা।